![]() |
ছবি : সংগৃহিত |
বাড়ছে গরম। সঙ্গে বাড়ছে হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোকের ঝুঁকি। ইতোমধ্যে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে া
হিট স্ট্রোকের কিছু লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো জানা থাকলে নিজে যেমন সচেতন থাকা যায়, অন্যদের দিকেও খেয়াল রাখা যায় া
চলুন জেনে নিই , হিট স্ট্রোক কী ? এর লক্ষণ , কারণ ও প্রতিকার া
হিট স্ট্রোক কী :
হিট স্ট্রোক হল একটি গুরুতর তাপজনিত অসুস্থতা যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেশি হয়ে যায়। এর ফলে সাধারণত ঘাম হয় না, তবে পরিশ্রমজনিত হিট স্ট্রোকে শরীর থেকে ঘাম নিঃসৃত হয়। এর শুরু হঠাৎ করে বা ধীরে ধীরে হতে পারে। এটি জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ একটি পরিস্থিতি, কারণ এর ফলে বহুসংখ্যক অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হিট স্ট্রোকজনিত জটিলতার মধ্যে খিঁচুনি, হার্ট এ্যাটাক ও কিডনি বৈকল্য খুবই সাধারণ।
লক্ষণ :
1. ত্বক লাল হয়ে যাওয়া
2.মাথা চক্কর দেওয়া
3.বমি বমি ভাব
4. নিস্তেজ হয়ে পড়া
5.মূর্ছা যাওয়া6.কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়া7.পেশি সংকুচিত হওয়া
8.মাথা ব্যথা9.প্রচণ্ড ঘাম হওয়া10.ক্লান্তি
কারণ :
- পরিবেশের উচ্চ তাপমাত্রা
- অতিরিক্ত শারিরিক পরিশ্রম।
- চরম পরিবেশে অবস্থান করা
- পরিশ্রমমূলক কাজের জন্য দীর্ঘ সময় তাপের সংস্পর্শে আসা া
- স্বাস্থ্যগত সমস্যা।
- বংশগত প্রবণতা া
- শরীরে পানিশূন্যতা বা মিনারেলস (minerals)- এর অভাব
- কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায়, যেমন- ডাই-ইউরেটিক্স (diuretics), বিটা ব্লকারস (beta blockers), অ্যালকোহল (alcohol)
- হার্ট (heart)-এর বা স্কিন (skin)-এর অসুখে
প্রতিকার :
1.পর্যাপ্ত তরল পানীয় পান করা
2.অতিরিক্ত তাপমাত্রাযুক্ত পরিবেশ এড়িয়ে চলা।
3.হালকা, ঢিলেঢালা পোশাক পরা
4.শরীর দ্রুত ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা করা
5.দেহে পানি ছিটানো,
6.পাখা দিয়ে বাতাস করা,
7.বরফশীতল পানিতে নিমজ্জিত রাখা
8.হেলদি ও লিকুইড খাবার ডায়েটে রাখা
9.অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকা
10.ব্যায়াম ভোরবেলায় করা
11.এবং সর্বোপরি পানিশূন্যতা এড়ানোর জন্য সাবধানতা অবলম্বন করা া
প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রথম পরামর্শ, এই গরমে কড়া রোদ ও ভিড় এড়িয়ে চলুন। যেহেতু এটি একটি জরুরি অবস্থা, তাই এর চিকিৎসাও দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। এই রকম পরিস্থিতিতে প্রথমেই যা করা দরকার তা হলো, রোগীর শরীর ঠান্ডা করা এবং খোলা বা ফাঁকা স্থানে নিয়ে যাওয়া। ভারি পোশাক পরে থাকলে সেটা চেঞ্জ করে পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাক পরিয়ে দিন। ঠান্ডা বাতাসের ব্যবস্থা করুন, প্রয়োজন মনে হলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিন।
রোগীর সুস্থ হতে কয়েকদিন পর্যন্ত সময় লাগবে সেটা এর তীব্রতা বা ধরনের উপর নির্ভর করে। যদি সঠিক চিকিৎসা করা না হয় তাহলে হিট স্ট্রোক রোগীর মস্তিষ্ক (brain), পেশী (muscles), কিডনি (kidney) এবং অন্যান্য অঙ্গগুলোকেও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা শুধুমাত্র শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য কিছু না করে বরং পানি বা লিকুইড (liquid) জাতীয় খাবার গ্রহণের উপর জোর দিতে বলেন।
শিশু ও বয়স্কদের জন্য টিপস
সব বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোক এক রকম হলেও, বয়স্ক ও শিশুদের প্রতি আলাদা নজর রাখা জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে যেন তাদের শরীরে কোনভাবেই পানিশূন্যতা দেখা না দেয়। যেহেতু ১-২ বছর বয়সী শিশুরা নিজেদের শারীরিক অসুবিধাগুলোর কথা বলতে পারে না। তাই গরমের দিনে তাদের বার বার পানি বা শরবত দিতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়তে দেয়া যাবে না। তাদের খোলামেলা জায়গায় বা প্রচুর বাতাস আছে এরকম জায়গায় রাখতে হবে।
শিশুদের মতো বয়স্কদের জন্যও খোলামেলা স্থান বাছাই করা উচিত। যাদের ডায়াবেটিস (diabetes)– এর সমস্যা রয়েছে তাদের শরবত বা মিষ্টি জুস না দিয়ে পানি, ডাবের পানি এগুলো দিতে হবে।
এই গরমে আমি বা আপনি যেকোনো সময়ে হিট স্ট্রোক-এ আক্রান্ত হতে পারি। তৎক্ষণাৎ প্রতিরোধের বা মোকাবেলার উপায়গুলো জানা থাকলে আমরা খুব সহজেই এই পরিস্থিতি থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখুক া আমিন া
0 Comments