Ads

আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস 2024 : ইতিহাস ও তাৎপর্য


ছবি : সংগৃহিত


 আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস, যা মে দিবস বা শ্রমিক দিবস নামেও পরিচিত, বাংলাদেশ, ভারত, ফ্রান্স,  কিউবা, চীন, রাশিয়া এবং আরও অনেকগুলি সহ ৮০ টিরও বেশি দেশে প্রতি বছর পহেলা মে পালন করা হয়। শ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য অবদানকে স্বীকৃতি ও সম্মান জানাতে এবং শ্রমিকদের অধিকার ও সুযোগের প্রচারের লক্ষ্যে ঐতিহাসিক শ্রম আন্দোলনকে চিহ্নিত করার জন্য দিবসটি পালিত হয়।

যদিও এই দিবসের পেছনের আসল প্রতিবাদটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে, কিন্তু সেখানে এটি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার পালন করা হয়ে থাকে।

বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উদযাপন

ভিন্ন ভিন্ন নামের মধ্যে লেবার ডে এবং ওয়ার্কাস ডে- এই দুটি নামই বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া বেশ কিছু দেশে সময়েরও ভিন্নতা রয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিক দিবস হিসেবে উদযাপন করার অধিকাংশ দেশ পহেলা মে’কেই বেছে নিয়েছে 

বাংলাদেশে মে দিবসে সরকারি ছুটি। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়ে থাকেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন দিনটি পালন করতে শোভাযাত্রা, শ্রমিক সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে থাকে। মে দিবসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল , ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক ফেডারেশন সহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালন করে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে মে দিবস উদ্‌যাপন করা হয়।

বাংলাদেশে দিবসটির এবারের নির্ধারিত প্রতিপাদ্য ' শ্রমিক মালিক গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ।'


আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের ইতিহাস

১৮৮৬ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় ৪ লাখ শ্রমিক ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেন। শুরুটা শান্তিপূর্ণভাবে হলেও বিক্ষোভের তৃতীয় দিনে শিকাগোতে কিছুটা সহিংসতা হয়। পুলিশ নিরস্ত্র শ্রমিকদের উপর গুলি চালানোয় বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিহত হন। ফলশ্রুতিতে পরের দিন বিক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে একটি বোমা ছুঁড়ে মারে। একই সঙ্গে পুলিশের গুলি বর্ষণও চলছিল। এভাবে দুপক্ষের পাল্টা আঘাতে ৭ পুলিশ কর্মকর্তা ও ৪ জন শ্রমিক নিহত হন। বোমাটি ছুঁড়ে মারা মূল ব্যক্তিকে শনাক্ত না করা গেলেও ৮ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং একজন ১৫ বছরের কারাদণ্ড পান।

দ্য হেমার্কেট অ্যাফেয়ার নামে পরিচিত এই ঘটনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের আন্দোলনে যাওয়ার জন্য ছিল যথেষ্ট উৎসাহব্যাঞ্জক।

হেমার্কেট ঘটনাটি ক্রমেই শ্রমিকদের অধিকারের সংগ্রামের একটি আন্তর্জাতিক প্রতীক হয়ে ওঠে। এই পটভূমিতেই মে মাসের ১ তারিখকে বেছে নেওয়া হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে।

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের তাৎপর্য 

মে দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই শ্রমিকরা তাদের উপযুক্ত সামাজিক মর্যাদা পেয়েছে। কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টায় নেমে এসেছে। মে দিবসের মাধ্যমেই শ্রমিকদের জীবনযাত্রার উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং কমতে শুরু করেছে সামাজিক বৈষম্য। শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদার প্রতি সম্মান জানাতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়েছিল। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশে যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের এই উন্নয়নশীল দেশে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসেও মে দিবসের চেতনা ও তাৎপর্য শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।


বর্তমানের এই উচ্চমূল্যের বাজারে যেখানে প্রতিটি পণ্যের দামই আকাশছোঁয়া সেখানে একজন শ্রমিকের মাত্র দশ/বারো হাজার টাকায় কীভাবে তাদের সংসার চলবে। সুতরাং কিছুদিন পররপরই তাদের আন্দোলনে নামতে হয়। মালিকের মুনাফা এবং শ্রমিকের মজুরির যে বিরোধ- সেই বিরোধে শ্রমিক সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও শক্তিতে তারা দুর্বল এবং শোষিত। 

ফলে বিশ্বজুড়ে পোশাক, খাদ্য-পণ্য ও ব্যাবহারিক অন্যান্য পণ্য উৎপাদন সকল রেকর্ড ভেঙে ফেললেও তা শ্রমিকদের স্বার্থের নাগালের বাইরেই থেকে যায়। পণ্য উৎপাদনের পরে তা বাজারজাতকরণোত্তর আয়ের সবচেয়ে বড়ো অংশটি মালিক বুঝে নিলেও শ্রমিকরা তাদের ন্যূনতম পারিশ্রমিক পাওয়ার ক্ষেত্রে কেন সংগ্রাম করবে এটা বোধগম্য নয়। 

শ্রমিকরা যে সামান্য আয় করে সেখান থেকে খাদ্য, বাড়িভাড়া, পোশাক, চিকিৎসায় ব্যয় ন্যূনতমভাবে মিটে যাবার পরে তাদের হাতে কোনো সঞ্চয় তো থাকেই না বরং তাদের ঋণে জর্জরিত হতে হয়। 

আর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ক্রমাগতই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। বিশ্বজুড়েই তারা ক্রমাগত বেকার হয়ে পড়ছে। রাষ্ট্র ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়টি বিচক্ষণতার সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। 

সর্বোপরি, ই দিবসকে কেন্দ্র করে মালিক, শ্রমিক ও রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষ তাদের সর্বোচ্চ বিবেচনাবোধ ধারণপূর্বক মানবিক আচরণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে- এটাই মে দিবসের প্রতিপাদ্য।







Post a Comment

0 Comments