ছবি : সংগৃহিত |
আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস, যা মে দিবস বা শ্রমিক দিবস নামেও পরিচিত, বাংলাদেশ, ভারত, ফ্রান্স, কিউবা, চীন, রাশিয়া এবং আরও অনেকগুলি সহ ৮০ টিরও বেশি দেশে প্রতি বছর পহেলা মে পালন করা হয়। শ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য অবদানকে স্বীকৃতি ও সম্মান জানাতে এবং শ্রমিকদের অধিকার ও সুযোগের প্রচারের লক্ষ্যে ঐতিহাসিক শ্রম আন্দোলনকে চিহ্নিত করার জন্য দিবসটি পালিত হয়।
যদিও এই দিবসের পেছনের আসল প্রতিবাদটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে, কিন্তু সেখানে এটি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার পালন করা হয়ে থাকে।
বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উদযাপন
১৮৮৬ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় ৪ লাখ শ্রমিক ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেন। শুরুটা শান্তিপূর্ণভাবে হলেও বিক্ষোভের তৃতীয় দিনে শিকাগোতে কিছুটা সহিংসতা হয়। পুলিশ নিরস্ত্র শ্রমিকদের উপর গুলি চালানোয় বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিহত হন। ফলশ্রুতিতে পরের দিন বিক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে একটি বোমা ছুঁড়ে মারে। একই সঙ্গে পুলিশের গুলি বর্ষণও চলছিল। এভাবে দুপক্ষের পাল্টা আঘাতে ৭ পুলিশ কর্মকর্তা ও ৪ জন শ্রমিক নিহত হন। বোমাটি ছুঁড়ে মারা মূল ব্যক্তিকে শনাক্ত না করা গেলেও ৮ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং একজন ১৫ বছরের কারাদণ্ড পান।
দ্য হেমার্কেট অ্যাফেয়ার নামে পরিচিত এই ঘটনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের আন্দোলনে যাওয়ার জন্য ছিল যথেষ্ট উৎসাহব্যাঞ্জক।
হেমার্কেট ঘটনাটি ক্রমেই শ্রমিকদের অধিকারের সংগ্রামের একটি আন্তর্জাতিক প্রতীক হয়ে ওঠে। এই পটভূমিতেই মে মাসের ১ তারিখকে বেছে নেওয়া হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের তাৎপর্য
মে দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই শ্রমিকরা তাদের উপযুক্ত সামাজিক মর্যাদা পেয়েছে। কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টায় নেমে এসেছে। মে দিবসের মাধ্যমেই শ্রমিকদের জীবনযাত্রার উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং কমতে শুরু করেছে সামাজিক বৈষম্য। শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদার প্রতি সম্মান জানাতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়েছিল।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশে যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের এই উন্নয়নশীল দেশে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসেও মে দিবসের চেতনা ও তাৎপর্য শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
0 Comments