![]() |
হেজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ |
হেজবুল্লাহ কারা ?
হেজবুল্লাহ একটি শিয়া ইসলামপন্থী রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠন, যা লেবাননে অবস্থিত। ১৯৮২ সালে ইসরায়েলি আক্রমণের সময় ইরানের সহায়তায় এটি গঠিত হয়েছিল।
উদ্দেশ্য ছিল, লেবাননে ইসলামিক আন্দোলনের প্রসার ও সেখানে হামলা করা ইসরায়েলিদের সাথে লড়াই। মূলত শিয়া মুসলিমদের নিয়ে গঠন হয় হেজবুল্লাহ।
হিজবুল্লাহর প্রভাব লেবাননের বাইরেও বিস্তৃত। সংগঠনটি মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে অসংখ্য সংঘর্ষে জড়িত, প্রায়শই ইরানি স্বার্থের জন্য প্রক্সি হিসেবে কাজ করে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এর সম্পৃক্ততা, যেখানে এটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং চরমপন্থী দলগুলির বিরুদ্ধে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর পক্ষ নিয়ে লড়াই করেছিল ।
সিরিয়ার টানা চারবারের প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের প্রতি হিজবুল্লাহর সমর্থন সিরিয়াকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছে ।
কতটা শক্তিশালী হেজবুল্লাহ?
হেজবুল্লাহর সবচেয়ে বড় শক্তি হল তাদের আঞ্চলিক প্রভাব ও সামরিক সক্ষমতা। যদিও ইসরায়েলের তুলনায় তাদের সামরিক শক্তি সীমিত, তবে তারা গেরিলা যুদ্ধ এবং ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণে দক্ষ। হেজবুল্লাহ একাধিকবার ইসরায়েলের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে এবং ইসরায়েলকে প্রতিরোধের জন্য হিজবুল্লাহ সারা বিশ্বে বিশেষভাবে পরিচিত।
হেজবুল্লাহর একটি সুসংগঠিত ও প্রশিক্ষিত সামরিক শাখা রয়েছে, যার সদস্য সংখ্যা হাজারের উপরে। তাদের কাছে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং অন্যান্য আধুনিক অস্ত্র রয়েছে, যা ইরান থেকে সহায়তা পেয়ে থাকে। হেজবুল্লাহ লেবাননের দক্ষিণ অংশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার সাফল্যের সাথে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে।
হেজবুল্লাহ-র প্রধান শেখ হাসান নাসরাল্লাহ-র দাবি অনুযায়ী তাদের প্রায় এক লক্ষ যোদ্ধা আছেন। যদিও বিভিন্ন নিরপেক্ষ সূত্রে এই সংখ্যাটা ২০ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ।
হিজবুল্লাহ চাইলে ইসরাইলের সর্বত্র হামলা চালাতে পারে। তাদের কাছে রয়েছে শক্তিশালী সব রকেট, ড্রোন ও অত্যাধুনিক অস্ত্রভান্ডার। হিজবুল্লাহর তুলনায় ইসরাইলের দক্ষ ও শক্তিশালী সেনাবহর থাকলেও সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির রয়েছে পাঁচশ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম রকেট ও ড্রোন ।
2000 সালে, ইসরায়েলকে দক্ষিণ লেবানন থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করার জন্য হিজবুল্লাহকে ব্যাপকভাবে কৃতিত্ব দেওয়া হয় এবং একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ শক্তি হিসাবে তার অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে। এই ঘটনাটি ধীরে ধীরে হিজবুল্লাহকে লেবাননের জাতীয় রাজনীতিতে প্রধান খেলোয়াড় হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে । বেশ কিছু সংসদীয় আসন ও মন্ত্রী পদ তারা ইতোমধ্যে বাগিয়ে নিয়েছে ।
হিজবুল্লাহ প্রাথমিকভাবে লেবাননের প্রান্তিক শিয়া জনগোষ্ঠীকে, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল এবং বেকা উপত্যকায় সামাজিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে ইসরায়েল এবং পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে লেবাননের সার্বভৌমত্বের রক্ষক হিসাবে তারা কাজ করে থাকে ।
সময়ের সাথে সাথে, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি বাহিনী এবং তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ।
হেজবুল্লাহ ইসরায়েলের সাথে সবচেয়ে বড় আকারের যুদ্ধ করেছে ২০০৬ সালে। ইসরায়েলের সাথে ৩৪ দিনের সেই যুদ্ধে লেবাননের ১১২৫ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয় যাদের বেশির ভাগ ছিল সাধারণ নাগরিক। বিপরীতে ইসরায়েলে মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের যাদের বেশির ভাগই ছিল সেনা। এর পর থেকে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করে গেছে গোষ্ঠীটি।
২০১২ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সুন্নি বিদ্রোহীদের মোকাবেলায় হেজবুল্লাহকে নিয়োগের পর থেকে তাদের সামরিক সক্ষমতা বেড়েছে বলে জানাচ্ছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সম্প্রতি, ইসরায়েলে প্রায় সাড়ে ৩০০ রকেট ছুড়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলের গভীরে সামরিক ঘাঁটিতে এসব ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। পরিকল্পনা মাফিক ড্রোনগুলো নির্ধারিত লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে বলে জানানো হয়। খবর আল জাজিরার।
0 Comments