![]() |
মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প। সংগৃহীত ছবি |
জেনেভা ক্যাম্পের পরিচিতি
জেনেভা ক্যাম্প ঢাকার মোহাম্মদপুরে প্রায় ২৫ একর জায়গার উপর অবস্থিত একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, যা মূলত বিহারী মুসলিমদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, এ অঞ্চলে অনেক উর্দুভাষী বিহারী মুসলিম অবশিষ্ট থেকে যায়। এই বিহারীরা পাকিস্তানে যেতে চাইলেও অনেকেই যেতে পারেনি এবং নতুন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তারা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। তাদের জন্য অস্থায়ীভাবে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) "জেনেভা ক্যাম্প" নামে এই ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে, যা তখন থেকে স্থায়ী বসতি হিসেবে গড়ে উঠেছে।
এখানকার মানুষজন একটি সীমাবদ্ধ পরিবেশে বসবাস করে, যেখানে নাগরিক সুবিধা এবং জীবনমান খুবই নিম্নমানের।
মাদক ব্যবসার উত্থান
জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা আজ একটি বড় সমস্যা। ক্যাম্পটির সরু গলি, উচ্চ জনঘনত্ব এবং পুলিশের সীমিত উপস্থিতি এই ধরনের কার্যকলাপের জন্য একটি নিরাপদ স্থানে পরিণত করেছে। ক্যাম্পের কিছু অংশে স্থানীয় ও প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীরা সক্রিয়ভাবে মাদক বিক্রি করে, যা পুরো ক্যাম্পে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা তৈরি করেছে। ক্যাম্পের অনেক তরুণ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, যা তাদের স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যত উভয়কেই বিপন্ন করছে।
মাদক ব্যবসার প্রভাব
মাদক ব্যবসার কারণে ক্যাম্পের সামাজিক পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাদকাসক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় চুরি, ছিনতাই এবং সহিংসতার মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও বেড়ে গেছে। অনেকে নিজেদের আর্থিক সমস্যার কারণে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ছে, যা পুরো ক্যাম্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং পুলিশ নিয়মিতভাবে জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হলেও মাদক ব্যবসা পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। কিছু শক্তিশালী স্থানীয় গোষ্ঠী ও অপরাধী সিন্ডিকেট ক্যাম্পে মাদক ব্যবসাকে চালিয়ে যাচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনকে বেগ পেতে হচ্ছে।
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যাসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক ঘটনায় যৌথ অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত দুই দিনে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, র্যাব এবং সেনাবাহিনীসহ যৌথ অভিযান চালিয়ে অন্তত ৭৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে আরও নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
মানবিক সমস্যা ও করণীয়
মাদক সমস্যা সমাধানে শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। ক্যাম্পের মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সমাজের সহযোগিতা ও কর্মসংস্থান বাড়ানো প্রয়োজন। মাদকবিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম এবং তরুণদের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো যেতে পারে, যাতে তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য মাদক ব্যবসার দিকে ঝুঁকে না পড়ে।
জেনেভা ক্যাম্পে মাদকের প্রবণতা কেবল এলাকাটির জন্য নয়, সমগ্র ঢাকা শহরের জন্য একটি বড় হুমকি। সরকারের সক্রিয় প্রচেষ্টা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এবং মানবিক সহায়তার মাধ্যমে ক্যাম্পের পরিবেশে পরিবর্তন আনা সম্ভব, যা মাদকমুক্ত একটি নিরাপদ সমাজ গঠনে সহায়ক হবে ।
0 Comments