৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মাঝে শুরু হয় নতুন প্রত্যাশা। দেশের রাজনীতিতে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। সেই সুবাধে গত ৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠনের কিছু দিন পর নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কথা জানায় সংগঠনটি। এই সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়—এমন মতাদর্শের লোকদের নিয়ে ‘মধ্যম পন্থা’র রাজনৈতিক দল যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ছাত্ররা।
আগামী ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চে নতুন দলের ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছে নাগরিক কমিটির একাধিক সূত্র।
নতুন দল গঠন নিয়ে সর্বত্রই চলছে নানান জল্পনা- কল্পনা। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে রাজনৈতিক মহলের আলোচনায়ও গুরুত্ব পাচ্ছে।
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে কী কী থাকছে?
চার শীর্ষ পদে আসতে পারেন যারা
নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের কাঠামোতে আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠক— এই চারটি পদ রাখা হবে।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ—এই চারটি শীর্ষ পদে আসতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, 'একক নেতার সিদ্ধান্তে দল চালানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে আমরা রাজনীতি করবো। এই সংস্কৃতির পরিবর্তন ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের এখানে একজন সাধারণ সদস্য ও দলীয় প্রধানের মতামত সমান গুরুত্ব পাবে।'
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, "আমরা একটা মধ্যমপন্থি রাজনীতির কথা বলছি। আমরা বাম-ডান এমন যে বিভাজন আছে সেগুলোতে ঢুকতে চাই না। আমরা বাংলাদেশ প্রশ্নে এক থাকতে চাই। ইসলাম ফোবিয়ার রাজনীতি অথবা উগ্র ইসলামপন্থি বা উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মধ্যেও আমরা নেই।"
তাছাড়া, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, "আমরা এখানে সাম্য, ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের কথা বলছি। এটাকেই হাইলাইট করতে চাই।"
"একইসঙ্গে একটা রাষ্ট্রে যে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বসবাস করে, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে, সেই বহুত্ববাদকে স্বীকার করেই কীভাবে একটা এগ্রিমেন্টের মধ্য দিয়ে এগোনো যায় যেভাবে আমরা অভ্যুত্থানে এগিয়েছি, সেইটা হচ্ছে আমাদের মূল ফোকাস পয়েন্ট।"
"আমরা ডানের দিকেও ঝুঁকবো না, বামের দিকেও ঝুঁকবো না। সাম্য, ন্যায়বিচার, সুশাসনকে ঘিরে আমরা হবো একটা মধ্যপন্থী দল যেন আমরা সব ধরনের মানুষকে ধারণ করতে পারি।"
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, "আমরা অধিকারের রাজনীতি, দায় ও দরদের রাজনীতি এগুলোকে সামনে নিয়ে আসবো যাতে এখানে নির্দিষ্ট কোনো মত বা ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে না ওঠে।"
"এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে শুধু বাংলাদেশ, এই দেশের মানুষের অধিকার এবং রাষ্ট্র গঠনের কাজ। এখানে যে কোনো ধর্মের মানুষ, যে কোনো মতের মানুষ, যে কোনো আদর্শের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে।"
সফল হতে এরদোয়ান, ইমরান খান, কেজরিওয়ালের মডেলে নতুন দল করতে চায় ছাত্ররা
![]() |
ছবি : সংগৃহিত |
দল গঠনের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা জানান, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এবং দেশের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে তারা নতুন দল নিয়ে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে একক কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের আদর্শে নয়; বরং বিশ্বব্যাপী দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বিভিন্ন দেশের সফল রাজনৈতিক দলগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান।
যার মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিশেষভাবে নজর কেড়েছে তুরস্কের রিচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের একে পার্টি, পাকিস্তানের ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি।
সফলতার মন্ত্র খুঁজতে নতুন এই তিনটি দলের কর্মসূচি, সাংগঠনিক কাঠামো ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করছে ছাত্ররা।
জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, এসব দল কীভাবে জনগণের কাছে জনপ্রিয় হতে পেরেছে সেগুলো খতিয়ে দেখছেন তারা।
"এই পার্টিগুলো আসলে কীভাবে জনগণের কাছে গিয়েছে, জনগণের ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে তারা কোন ধরনের কৌশল নিয়েছে, তাদের গঠনতান্ত্রিক কাঠামোটা কেমন -এসব বিষয় আমরা স্টাডি করছি।"
"আমরা বোঝার চেষ্টা করছি ওই অঞ্চলের তরুণদের বোঝার ক্ষেত্রে এবং রাজনীতি বোঝার ক্ষেত্রে তারা কী চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এসেছে যেটা ওই দেশের লোকজন গ্রহণ করেছে এবং তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে শাসনক্ষমতার দায়িত্ব দিয়েছে।"
"এখানে দেখবেন এরদেয়ানের পার্টি কিন্তু ফোকাস করেছে ইনসাফের ওপর। তার নামই হচ্ছে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি। যেটা আমরাও বলছি।"
"আমরা ন্যায়বিচারের কথা বলছি, সুশাসনের কথা বলছি। অন্যদিকে ভারতের আম আদমি পার্টি দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করেছে। দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম করেছে। আমরা সেগুলোও দেখছি।" যোগ করেন মি. আহসান।
দলটির শীর্ষ পদে কে বসবেন ?
দলটির শীর্ষ পদে কে বসবেন সেটা এখনও প্রকাশ্য নয়। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এ পদে আসতে পারেন এমন গুঞ্জন প্রবল। সেক্ষেত্রে উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করবেন তিনি।
তবে শীর্ষপদে যিনিই দায়িত্ব পান না কেন এটা নিশ্চিত যে তিনি হবেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদেরই কেউ একজন।
0 Comments